How antibiotics work in the human body? । অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের শরীরে কিভাবে কাজ করে?
অ্যান্টিবায়োটিক কী, কী দিয়ে তৈরি এবং মানুষের শরীরে কীভাবে কাজ করে?
অ্যান্টিবায়োটিক আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। এই আর্টিকেলে জানুন অ্যান্টিবায়োটিক কী, কোন কোন উপাদান দিয়ে তৈরি এবং মানুষের শরীরে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ঠিক কীভাবে কাজ করে।
🧬 অ্যান্টিবায়োটিক কী?
অ্যান্টিবায়োটিক হলো এমন ঔষধ যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে বা তাদের বৃদ্ধি থামিয়ে দেয়। ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না—অর্থাৎ সর্দি, কাশি, ফ্লু, ভাইরাল জ্বর ইত্যাদিতে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত নয়।
🔬 অ্যান্টিবায়োটিক কী দিয়ে তৈরি?
অ্যান্টিবায়োটিক বিভিন্ন উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। প্রধান সোর্স ও উপাদানগুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
১️ প্রাকৃতিক উৎস (Natural Antibiotics)
অনেক অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হয় প্রকৃতিতে থাকা মাইক্রোঅর্গানিজম থেকে।
- ব্যাকটেরিয়া থেকে: Streptomyces → টেট্রাসাইক্লিন, স্ট্রেপটোমাইসিন; Bacillus → ব্যাসিট্রাসিন, পলিমাইক্সিন।
- ফাঙ্গাস/ছত্রাক থেকে: Penicillium → পেনিসিলিন, Cephalosporium → সেফালোস্পোরিন গ্রুপ।
২️ সেমি-সিন্থেটিক অ্যান্টিবায়োটিক
প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিককে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তন করে আরও কার্যকর ও নিরাপদ বানানো হয়। উদাহরণঃ অ্যামোক্সিসিলিন, সেফালেক্সিন, আজিথ্রোমাইসিন।
৩️ সম্পূর্ণ সিন্থেটিক অ্যান্টিবায়োটিক
পুরোটাই ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি। উদাহরণঃ Sulfonamides, Fluoroquinolones (Ciprofloxacin, Levofloxacin), Linezolid ইত্যাদি।
৪️ কেমিক্যাল গঠনের দিক থেকে গ্রুপ
অ্যান্টিবায়োটিকের কর্মক্ষমতা অনেকাংশে নির্ভর করে এদের কেমিক্যাল স্ট্রাকচারের উপরঃ
- β-lactam ring (Penicillin, Cephalosporin)
- Macrolide ring (Azithromycin, Erythromycin)
- Aminoglycosides, Polypeptides
- Quinolones ইত্যাদি
🧠 মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কীভাবে কাজ করে?
অ্যান্টিবায়োটিকের মূল কাজ হলো ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা বা তাদের বংশবৃদ্ধি থামানো। সাধারণত ৫টি প্রধান টার্গেটের মাধ্যমে এগুলো কাজ করেঃ
১️ ব্যাকটেরিয়ার সেল ওয়াল ভেঙে ফেলা
অনেক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার সেল ওয়াল তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে ব্যাকটেরিয়া ফুলে উঠে, ফেটে যায় এবং মারা যায়।
উদাহরণ: Penicillin, Cephalosporins, Carbapenems
২️ প্রোটিন তৈরি বন্ধ করা (Protein Synthesis Block)
ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকতে নানান ধরনের প্রোটিন তৈরি করে। অ্যান্টিবায়োটিক তাদের রাইবোসোমে এসে প্রোটিন তৈরি বন্ধ করে দেয়।
উদাহরণ: Tetracycline, Azithromycin, Clindamycin, Aminoglycosides
৩️ DNA বা RNA তৈরির প্রক্রিয়া থামানো
কিছু অ্যান্টিবায়োটিক সরাসরি ব্যাকটেরিয়ার DNA বা RNA তৈরির এনজাইম ব্লক করে, ফলে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
উদাহরণ: Ciprofloxacin, Levofloxacin, Rifampin
৪️ ফোলিক এসিড বা গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম ব্লক করা
ব্যাকটেরিয়া নিজে ফোলিক এসিড তৈরি করে, যা তাদের জন্য জরুরি। এই পথ ব্লক করলে ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে না।
উদাহরণ: Sulfonamides, Trimethoprim
৫️ সেল মেমব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত করা
কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার সেল মেমব্রেন ফুটো করে দেয়, ফলে প্রয়োজনীয় উপাদান বের হয়ে গিয়ে ব্যাকটেরিয়া মারা যায়।
উদাহরণ: Polymyxin B, Daptomycin
⚠ অ্যান্টিবায়োটিক ভুলভাবে ব্যবহার করলে কী হয়?
ভুল ব্যবহার করলে “অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স” তৈরি হয়, অর্থাৎ ভবিষ্যতে একই অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ নাও করতে পারে।
- অতিরিক্ত বা অকারণে খেলে শরীরে রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়।
- কিডনি ও লিভারের উপর চাপ পড়তে পারে।
- গাট ফ্লোরা নষ্ট হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
সঠিক নিয়ম: শুধুমাত্র নিবন্ধিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ডোজ ও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা।
📝 উপসংহার
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের চিকিৎসায় এক অনন্য বিপ্লব এনেছে। প্রাকৃতিক, সেমি-সিন্থেটিক ও সিন্থেটিক—তিন ধরনের উৎস থেকে তৈরি এই ঔষধগুলো মূলত ব্যাকটেরিয়ার সেল ওয়াল, প্রোটিন, DNA/RNA বা এনজাইমকে টার্গেট করে কাজ করে।
তবে অকারণে ব্যবহার করলে অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের জন্য আশীর্বাদের বদলে অভিশাপও হতে পারে। তাই সচেতন হওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
