চোখের এলার্জির লক্ষণ, চিকিৎসা | Eye Allergy Symptoms & Treatment

 Symptoms of eye allergies, treatment

চোখের কালো মনির চারদিকে যে সাদা অংশ দেখা যায়, তার আবরণের নাম হলো কনজাংটিভা যার অবস্থান ভেতর থেকে আইল্যাশ বা চোখের চুল পর্যন্ত বিস্তৃত। এলার্জিজনিত কনজাংটিভার প্রদাহকে এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস বা চুলকানি রোগ বলা হয়।

এলার্জেন বা এলার্জি উদ্রেককর কী?

আমাদের চারদিকের পরিবেশে প্রচুর ক্ষুদ্র দৃশ্যমান অথবা অদৃশ্য বস্তুকণা অথবা পদার্থের অস্তিত্ব রয়েছে যা সরাসরি শরীরের সংস্পর্শে এসে এলার্জি সৃষ্টি করে। এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেও শরীরে ঢুকে এইসব বস্তুকণা শরীরের বিভিন্ন অংশে এলার্জির প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এসবের মধ্যে ফুলের রেণু, ছারপোকা, ধুলোবালি, বিভিন্ন খাবারের মধ্যে থাকা রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি অন্যতম।

চোখের এলার্জি কখন হয়?

সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে এলার্জির প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। ধুলাবালি বাতাসে উড়ে চোখের সংস্পর্শে এলে এলার্জেন সংবেদনশীল রোগীদের চোখের প্রদাহ শুরু হয়। এছাড়াও বসন্তকালে ফুলের রেণু বাতাসে উড়ে চোখের এলার্জি হতে পারে।

চোখের এলার্জি কাদের হয়?

সব এলার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থে সবার চোখে এলার্জি হয় না। এটা এক একজনের সংবেদনশীলতার ওপর নির্ভরশীল। কেউ ফুলের রেণুতে সংবেদনশীল আবার কেউ ধুলোবালি এবং খাবারে সংবেদনশীল। যাদের শরীরে এলার্জি বেশি হয় তাদের চোখের এলার্জি বেশি হয়। হাঁপানি রোগীদের চোখে এলার্জি বেশি হয়। বাচ্চাদের এবং যারা বাইরে ধুলোবালির সংস্পর্শে বেশি থাকে তাদের মধ্যে চোখের এলার্জি বেশি দেখা যায়। যাদের মাথায় খুশকি বেশি তাদের চোখেও খুশকির কারণে এলার্জির সংক্রমণ হতে পারে।

চোখের এলার্জি বা এলার্জিক কনজাংটিভাইটিসের লক্ষণ কী?

চোখ চুলকানো, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া, চোখের ভেতরে কিছু ময়লা পড়েছে এমন বোধ হওয়া, রোদে চোখ বন্ধ হয়ে আসা ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ হতে পারে। রাতে ঘুমের পর সকালবেলা চোখে সামান্য পিচুটি জমতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চোখে হাত দেয়া ও পানি পড়া এলার্জিক কনজাংটিভাইটিসের লক্ষণ হতে পারে। নাকে সর্দি ও চোখের চুলকানি একসাথে হতে পারে। বারবার একই সমস্যা নিয়ে রোগীরা ডাক্তারের কাছে আসতে পারে। ঔষধ দিলে কিছু দিন ভালো থাকলেও পরবর্তীতে একই অবস্থার পুনারাবৃত্তি হতে পারে।

চোখের এলার্জি রোগ প্রতিরোধে করণীয়ঃ

রোগী কে আগে জানতে হবে তার কোন ধরনের পদার্থ বা পরিবেশে এলার্জি আছে, তারপর সেটাকে এড়িয়ে চলতে হবে। শুষ্ক মৌসমে ধুলাবালি থেকে রক্ষা পেতে নাকে মুখে মাস্ক এবং চোখে সান গ্লাস ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঘরের কার্পেট নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে, এতে বাচ্চাদের এলার্জি অনেকাংশে হ্রাস পায়। গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, ডিম ইত্যাদিতে যাদের এলার্জি আছে, তাদের তা বর্জন করা ভালো। ডাক্তারের পরামর্শমতো ঔষধ সেবনে এবং চোখের ড্রপ ব্যবহারের মাধ্যমে। এলার্জির আক্রমণ হতে চোখকে রক্ষা করা যায়।


চোখের এলার্জি রোগের চিকিৎসাঃ

প্রথমত এলার্জেন থেকে দূরে থাকতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিরেকে কোনো ঔষধ সেবন এবং চোখে দেয়া ঠিক হবে না।

সোডিয়াম ক্রোমোগ্লাইকেট আইড্রপ এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস-এ কার্যকর যা দৈনিক ৩/৪ বার অনেক দিন ধরে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ব্যবহারে এলার্জির বারবার সংক্রমণ রোধ করা যায়।

কৃত্রিম চোখের পানি চোখের ড্রপ হিসেবে পাওয়া যায় যা চোখের ভেতর অবস্থানরত এলার্জেনকে দ্রবীভূত করে এবং পরবর্তীতে ধুয়ে ফেলে।

● ডিকনজেসটেন্ট আইড্রপ যেমন ন্যাফাজলিন হাইড্রোক্লোরাইড এলার্জিক কনজাংটিভাইটিসে অনেকাংশে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

এছাড়া লড়ঙ্মোইড, অলোপেটাডিন, পেমিরোলাস্ট ইত্যাদি আইড্রপ অনেকদিন চোখে ব্যবহারেও এলার্জির আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়।

● এই রোগে কিটোটিফেন আইড্রপের কার্যকারিতাও প্রমাণিত হয়েছে যা স্টাফেন, প্রসমা, অ্যালারিড, কিটোমার ইত্যাদি নামে বাজারে পাওয়া যায়।

● সাইকলোসপোরিন আইড্রপ (সাইপোরিন) এলার্জিক কনজাংটিভাইটিসের

অন্যতম সফল চিকিৎসা হিসেবে প্রমাণিত। এটা ব্যবহারে অতিরিক্ত এলার্জিতে ও স্টেরয়েড ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায়।

● খুব বেশি চুলকালে কেবল তখনই লোগ্রেড স্টেরয়েড যেমন কুরোমিথোলোন আইড্রপ দৈনিক ৩/৪ বার ১-২ সপ্তাহের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে বেশি দিন ব্যবহার করা যাবে না। উপরোল্লিখিত চিকিৎসাগুলো ডাক্তার রোগীর চোখের এলার্জি অবস্থা বুঝে পরামর্শ দেবেন।

চোখের এলার্জির চিকিৎসা কেন প্রয়োজন?

যেহেতু এটা একটি ক্রনিক রোগ সেহেতু চিকিৎসা না করালে বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন চোখের ভেতর গুটি ওঠা এবং পরবর্তীতে গুটি বড় হয়ে চোখের কালো রাজাতে আলসার জাতীয় প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে যা রোগীর জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হতে পারে। চোখে সবসময় প্রদাহ থাকার জন্য রোদে চলাফেরা করতে অসুবিধা হবে এবং লালচোখ নিয়ে সবরময় একটা বিব্রতকর সময় পার করতে হবে।

মনে রাখতে হবেঃ

যেসব বাচ্চার এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস আছে তাদের সাধারণত ২০ বছর বয়সের পর আপনাআপনিই এই রোগের আক্রমণ কমে যায়। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শে বাচ্চার চোখের যত্ন এবং ঔষধ ব্যবহারে নিয়মানুবর্তী হলে এলার্জিজনিত কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হয়। স্টেরয়েড জাতীয় ড্রপ ব্যবহারে খুব তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যায় বলে অনেক রোগী ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটি সবসময় ব্যবহার করে। মনে রাখতে হবে বহুদিন স্টেরয়েড ব্যবহার করলে গ্লুকোমা ও ছানিজনিত রোগের কারণে রোগী অন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে স্টেরয়েড ব্যবহারজনিত গ্লুকোমা রোগের কারণে অন্ধত্ব দিন দিন বাড়ছে। এ ব্যাপারে চিকিৎসক এবং রোগী উভয়েরই সজাগ হওয়া প্রয়োজন।

এলার্জির চিকিৎসার ফল আস্তে আস্তে পাওয়া যায় সুতরাং এ ব্যাপারে ডাক্তারের সুপরামর্শ যেমন প্রয়োজন তেমনিই প্রয়োজন রোগীর ধৈর্য্য এবং ঔষধ ব্যবহারে নিয়মানুবর্তিতা। পরিশেষে বলতে হয় এলার্জির কারণে কখনো অন্ধত্ব হয় না। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিরেকে অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড সেবনই অন্ধত্বের মূল কারণ।

লেখক : কনসালটেন্ট, পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
close